নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ জি-৭
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
১১-০২-২০২৫ ০৪:২৬:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১১-০২-২০২৫ ০৪:২৬:৪৪ অপরাহ্ন
প্রতীকী ছবি
বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে জি-সেভেনসহ ধনী দেশগুলো যথাযথভাবে প্রতিশ্রুতি পালন করছে না বরং তারা বাংলাদেশসহ উন্নয়শীল দেশগুলোতে আরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি সম্প্রসারণে কাজ করছে। এতে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের (জিইএম) এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী সম্ভব্য সৌর ও বায়ুবিদ্যুত সক্ষমতা এক পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নতুন এ সক্ষমতায় জি-৭ দেশগুলোর অবদান অত্যন্ত কম। অথচ নিজ দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের মত জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহজ বিনিয়োগ বাড়াতে এসব দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে ধনী দেশগুলো এলএনজি-কয়লার মতো দূষিত জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে জাপানের সহায়তায় ফসিল ফুয়েল নির্ভর ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি এন্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেখানে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো সহজ ও সম্ভাবনাময় খাতগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
জিইএম এর প্রতিবেদনে, গ্লোবাল সোলার পাওয়ার ট্র্যাকার ও গ্লোবাল উইন্ড পাওয়ার ট্র্যাকারে ঘোষিত বিশ্বব্যাপী সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পসমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রাক নির্মাণ পর্যায় বা নির্মাণাধীন রয়েছে, যেমন সৌর বিদ্যুতের সক্ষমতা ১ মেগাওয়াটের বেশি এবং বায়ু বিদ্যুতের সক্ষমতা ১০ মেগাওয়াটের বেশি প্রকল্প বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে, সম্ভাব্য সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মোট সক্ষমতা ৪.৪ টেরাওয়াওটে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা প্রায় সমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যথাক্রমে ২ টেরাওয়াট এবং ২.৫ টেরাওয়াট।
জিইএম এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়নে চীন বর্তমানে সর্বোচ্চ সম্ভব্য সক্ষমতা অর্জন করেছে, যা ১.৩ টেরাওয়াটের বেশি এবং বৈশ্বিক মোট সম্ভাব্য সক্ষমতার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। চীনের পরের অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল (৪১৭ গিগাওয়াট), অস্ট্রেলিয়া (৩৭২ গিগাওয়াট), যুক্তরাষ্ট্র (২১৮ গিগাওয়াট) এবং স্পেন (১৪৪ গিগাওয়াট)।
ভারত আগামী কয়েক বছরে প্রায় ১৩০ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার ৩৫ গিগাওয়াট ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত এক বছরে, ভারতের বৃহত সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দেশটির বড় বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, বিশ্ব অর্থনীতির ৪৫ শতাংশ জিডিপি ধারণকারী জি-৭ দেশগুলো বর্তমানে মাত্র ৫৯ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ কাজ করছে। যা চীনের তুলনায় অতি নগণ্য। এছাড়া বৈশ্বিক প্রকল্পের (৪১৬ গিগাওয়াট) তুলনায় বেশ কম।
এদিকে, চীনের বাইরে নির্মাণাধীন সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প কমে গেছে বলে জানাচ্ছে জিইএম। সম্ভব্য সক্ষমতা মাত্র ৭ শতাংশ বা ২২৬ গিগাওয়াট বর্তমানে নির্মাণাধীন। নবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলো সময়মতো চালু করতে ব্যর্থ হলে, কপ-২৮ এ নির্ধারিত ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির সক্ষমতা তিনগুণ করার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জিইএম’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্মাণাধীন ১৮৫ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২৪ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে বিশ্বব্যাপী, এসব প্রকল্পের ৫৯ শতাংশ নির্ধারিত সময়ে উৎপাদন শুরু করতে পেরেছে।
এদিকে সামগ্রিক সক্ষমতায় কম অংশীদারি থাকলেও জি-৭ দেশগুলোর প্রকল্পগুলো চীন ও অন্যান্য দেশের তুলনায় সময়মতো শেষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জি-৭ দেশগুলোর ৭৬ শতাংশ সৌর ও বায়ু প্রকল্প নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চালু হয়েছে, যেখানে চীনে এই হার ৫৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে এ হার ৫২ শতাংশ।
জিইএম এর গবেষণা বিশ্লেষক ডিরেন কোচাকুশাক বলেন, ‘গত বছর বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ সক্ষমতা বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক, তবে বিশ্বকে আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন সীমাবদ্ধতা, অনুমোদন জটিলতা এবং অর্থায়নের অভাবের মতো প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা তিনগুণ করার লক্ষ্যের দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এড়ানো যাবে।’
বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স